দেশে এ বছর পূজামণ্ডপ বেড়েছে ৫০টি

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে তিনটি বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়- দুর্গাপূজা চলাকালীন রাজনৈতিক কর্মসূচি না দেয়া; দুর্গাপূজাসহ অন্যান্য প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় স্কুল, কলেজ, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা না রাখা এবং এই সময়কালে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষা না রাখা।সারা দেশে এ বছর ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। গত বছর ৩২ হাজার ১১৮টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন করা হয়। সে হিসাবে এবার পূজামণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে ৫০টি।
শনিবার দুর্গোৎসব নিয়ে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মিলনায়তনে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজধানী ঢাকায় এ বছর ২৪১টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দুর্গোৎসব, যা গত বছরের থেকে ছয়টি বেশি। গত বছর ঢাকা মহানগরে ২৩৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছিল।
রোববার মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীদুর্গার আগমনী বার্তা ধ্বনিত হবে। আর ১ অক্টোবর ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে দেবীকে আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে দেবী বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তা শেষ হবে।
সংবাদ সম্মেলনে পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক বলেন, ‘গত বছরের ঘটনার প্রেক্ষাপটে এ বছর সরকার চাচ্ছে, কোনো অবস্থাতেই যেন দুর্গাপূজা ঘিরে দেশে কোনো ধরনের অঘটন না ঘটে। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও গত বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি সক্রিয়।
‘সারা দেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি পূজামণ্ডপের সুরক্ষা দেয়া খুব কঠিন। তাই আমরা এ বছর প্রতিটি মন্দিরে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করছি, যারা রাতেও মণ্ডপ পাহারা দেবে।’
জে এল ভৌমিক বলেন, ‘গত বছর পূজার সময়ে হামলার ঘটনাগুলোর কোনো বিচার হয়নি। আমাদের দাবি, ওইসব ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হোক।
‘বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই বারবার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ইশতেহারে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের কথা বলা হয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগেই এটা করতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনটি বিষয়ের প্রতি সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। সেগুলো হলো- দুর্গাপূজা চলাকালীন কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি না দেয়া; দুর্গাপূজাসহ অন্যান্য প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় স্কুল, কলেজ, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা না রাখা; দুর্গাপূজাসহ অন্যান্য প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষা না রাখা।
সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি দাবি উত্থাপন করা হয়৷
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- দুর্গাপূজায় দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করা; অন্যান্য জাতীয় উৎসবের মতো দুর্গাপূজাও জাতীয় মর্যাদায় পালনের পদক্ষেপ নেয়া; কারাগার, হাসপাতাল ও অনাথ আশ্রমে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা; দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়নে সাম্প্রতিক সময়ে সরকার গৃহীত পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়ন করা।
দাবিগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে- একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষিত ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি ফেরত প্রদানে প্রশাসনিক জটিলতা নিরসন এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া।
এ ছাড়া রয়েছে- দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি সরকারের এই মেয়াদে বাস্তবায়ন করা; হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের পরিবর্তে হিন্দু ফাউন্ডেশন গঠন করা; প্রতিটি জেলায় একটি করে মডেল মন্দির কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা; টোলগুলোর সংস্কার ও টোল শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন ধার্য করা এবং ২০২১ সালে দুর্গাপূজার সময়ে সংঘটিত সহিংসতাসহ বিভিন্ন সময়ে দেশব্যাপী হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনার তদন্ত ও দ্রুত বিচার করা।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন