
॥ দোলন কান্তি ধর ॥ ভগবান শিব সচ্চিদানন্দঘন লীলাময় পরম প্রভু। তিনি সত্য, সনাতন, অনাদি ও অনন্ত ব্রম্মহের স্বরূপ। তিনি সর্বশক্তিমান, শাশ্বত, নিরঞ্জন। সাকারে তিনি মহাদেব, লীলাময় প্রভু শিব, বিষ্ণু, ব্রম্মা ইত্যাদি নামে জানা গেলেও তিনি আদতে নিরাকার। এরজন্য উনার কোন মুর্তি পূজা হয় না। লিঙ্গম বা লিঙ্গ পূজা করা হয়। কিছু বিকৃত মস্তিষ্ক উনার এই পূজা কে পুরুষের লিঙ্গের সাথে তুলনা করে ধর্মকে হেয় বা নীচু দেখানর চেষ্টা করে। কিন্তু আদতে অজ্ঞ্যান ও মুর্খতার দরুন তাঁরা এর গুঢ তত্ত্ব অনুধাবন করতে ব্যার্থ হয়। সংস্কৃত লিঙ্গাম শব্দ থেকে লিঙ্গ শব্দের উৎপত্তি। যার অর্থ হল চিহ্ন। অর্থ্যাত পরম পুরুষ নিরাকার পরম ব্রহ্মের একটি চিহ্নকে আমরা উপাসনা করি। যা অনেকটাই নিরাকার ঈশ্বর উপাসনার মতন। পবিত্র বেদের মাঝে যে রুদ্রকে আমরা দেখি তা আসলে নিরাকার সেই পরম তত্ত্বের রূপ। এরজন্যই শৈবদের মাঝে অতিমার্গ ও মন্ত্রমার্গ শৈবরা পরম তত্ত্বের বৈদিক রুদ্রকে উপাসনা করেন। বলাবাহুল্য আমি নিজেও অতিমার্গ শৈবইসম অনুসরন করি। তাই যে বৈদিক রুদ্র ও পরম তত্ত্ব রূপ শিব এর মাঝে অভেদ করেন তিনি অল্প বিদ্যায় পারদর্শি এই কথা বোঝাই যায়। পরম নয়ন্তা, পরম প্রভু, পরম শক্তিমান। তিনি চির সুন্দর, চির নিরুপম। রহস্যময় মনরম তাঁর অপ্রাকৃত লীলা। তিনিই একমাত্র পরম সত্য ও অদ্বিতীয় পরমেশ্বর। শান্তম শিবম অদ্বৈতম। তাই শিব তত্ত্বই একমাত্র পরম তত্ত্ব। কিন্তু কিছু অজ্ঞ লোক এই বিষয়ে একেবারেই না জেনে বিজ্ঞ সাজতে গিয়ে অযথাই অপকথা বলে বেড়াচ্ছেন। বাংলাদেশী হিন্দুদের কাছে শিব বা মহাদেব হলেন তম গুন সম্পন্ন এক শ্মশানবাসী। যিনি মদ গাঁজা আর ভুত প্রেত নিয়ে পরে থাকেন। তাঁকে এই দেশের মানুষরা এতো মুল্য দেয় না বর্তমানে। কারন ইনি নাকি মুক্তি দিতে পারেন না। অবশ্য এইসব অবান্তর কথা এই অঞ্চলে বেশীদিন হয় নাই। আগে এই অঞ্চলের মানুষদের প্রধান উপাস্য ছিলেন মা কালী। যিনি দক্ষিণা কালী হিসাবে খুব জনপ্রিয় ছিলেন। চৈতন্য মহাপ্রভু আসার পর এই অঞ্চলে গৌড়ীয় মতবাদ বিস্তৃতি লাভ করে। এইখানে শাক্তবাদ এর কল্যানে মানুষ শিব সম্পর্কে এতটা জ্ঞ্যানি ছিলেন না। কিন্তু শিব এর পূজা ঠিকই করতেন। পূজা বলতে শিব লিঙ্গে একটু দুধ ঢেলে একটা কলা মাথায় দিয়ে বোম বোম বা ভলে বাবা ঠান্ডা হউ এই ধরনের আচরণ যা এখনও চলে আসছে। ব্যাপারটা অনেকটা যেন শিবকে ঠা-া রাখ নাহলে উনি পাগলামি করে সব নষ্ট করে দিবেন। কিন্তু আসলে কি তাই? এরজন্য আমার কিছু বক্তব্য শাস্ত্রের আলোকে ব্যাখ্যা করবো।যেহেতু এইদেশের সবাই পুরান তথা সংহিতায় বিশ্বাসী তাই আমি এর আলোকেই সমস্ত কিছু ব্যাখ্যা করবো। যারা বেদ বা উপনিষদ এর রেফারেন্স চান তাঁরা আমাকে ইনবক্স করতে পারেন। ভগবান শিব সাক্ষ্যাৎ সত্য সনাতন পরমেশ্বর। তিনি কালের উর্ধে বিরাজিত মহাকালেশ্বর। কাল বা সময় উনার অধীন। তাই সর্বযুগে সবার আরাধ্য ভগবান শিব। কিন্তু ঐ যে, অসাধু ও মুখ্যরা অপকথা বলে আর মানতে চায় না। তাই শাস্ত্র থেকে কিছু কথা বলবো।
অজ্ঞরা বলে থাকে যে , কলি কালে নাকি এক কৃষ্ণ নামে মুক্তি বাকীরা নাকি মুক্তি দিতে পারেন না। এরজন্যই যারা শিব উপাসনা করেন এদেরকে এরা হেয় বা হীন চোখে দেখে। কথাটা একটু যদি ঘুরিয়ে বলি তাহলে বলা যায় শাস্ত্রে শিব নামে মুক্তি নেই এই কথা নেই। বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় এরা শিব, দুর্গা, কালী ভক্তদের ইনিয়ে বিনিয়ে বা সরাসরি বলতে শুরু করে কলি যুগে নাকি এক কৃষ্ণ নাম ছাড়া মুক্তি নেই। এসব ক্ষেত্রে এরা কয়েকটি শ্লোক আওড়ায়। যথা- হরিনাম্ হরিনাম্ হরিনামব্য কেবলম্, কলৌও নাস্তব্য নাস্তব্য নাস্তব্য গতিরন্যথা, সারমর্ম হল ‘হরি( এদের ভাষায় কৃষ্ণ) নাম ছাড়া কলি যুগে মুক্তি নাই।‘ আর একটি শ্লোক হলÑ ভাগবত গীতার : সর্ব ধর্ম পরিত্যাজ্যং মামেকং শরনং ব্রজ, মানে সব ধর্ম ত্যাগ করে আমার স্মরণ নাও।
একটু বিশ্লেষনে যাই এবার। প্রথমে আসি হরি নাম নিয়ে। অবশ্যই, হরি মানে বিষ্ণু নামে মুক্তি আছে। কারন উনি পরম পুরুষের একটি পালন রূপ। উনার নাম নিয়ে ভক্ত প্রহ্লাদ বা ধ্রুব মুক্তি পেয়েছিলেন। এর হাজার প্রমান আছে। মহাবিষ্ণুর শ্রী চরনে আমার হাজার হাজার প্রনাম। কিন্তু অজ্ঞ্যানীরা এইখানে কৃষ্ণকে কোথায় পেলেন? যদি কেউ বলেন কৃষ্ণ উনার অবতার তাহলে উনার সাথে কৃষ্ণকে জড়ালে দোষ কথায়? আমি বলবো নৃসিংহ, রাম, পরশুরাম, বরাহ উনাদের সাথেও জড়ান না কেন? বা কেনই উনাদের নিয়ে আপনারা কোন পুরান আবিস্কার করেন না?জানি করবেন না কারন এতে আপনাদের রমরমা ব্যাবসা নষ্ট হবে আর সত্য উন্মচিত হবে। এবার আসি ভাগবত গীতার শ্লোকে।গীতা নিয়ে আমার অনেক কিছু বলার আছে। আসলে মুর্খ ও অল্প শিক্ষিত লোকজন বলে ভাগবত গীতা নাকি বেদসার সংক্ষেপ। শুনে হাসি পায় এরকম মুর্খ কথা শুনলে। আমাদের ধর্মে মোট ২০০ ধরনের গীতা আছে এর মাঝে ৪২টি গীতা অন্যতম।গীতা বলতে ৯৮% মানুষ ঐ ভাগবত গীতাকেই বোঝেন। বাস্তবে এর বাইরেও আরও অনেক কিছু যে আছে তা এই মুর্খ্য কুয়োর ব্যাঙেরা জানেন না। হিন্দু ধর্ম বলতে এরা শুধু বোঝে গৌড়ীয় তিলক দেয়া, মালা জপা আর একাদশী রেখে মনের সুখে লাফানো। হিন্দু ধর্মের খুব নগন্য ও তুচ্ছ একটি বিষয়কে আঁকড়ে ধরে এরা মনে করেন বিশ্ব জগতের সমস্ত জ্ঞ্যান আমার মাথায় গিজ গিজ করছে। আসলে যে ভগবত গীতা আপনারা দেখেন তা হিন্দু ধর্মের ইতিহাস নামে খ্যাত মহাভারতের খুব ছোট একটি অংশ মাত্র।শুধু এক মহাভারত থেকে প্রায় ২০+ গীতা বের হয়েছে। এবার আসি সেই ভগবত গীতা প্রসঙ্গে। ভগবত গীতাতে কৃষ্ণ আমি বলতে নিজেকে যে বোঝান নি তা অনুগীতার উৎপত্তিই আমাদের বলে দেয়। মহাভারতের ১৪ তম অধ্যায়ের অশ্বমেধ পর্বে অর্জুন যখন কৃষ্ণকে বলেন “হে কৃষ্ণ আমি ভগবত গীতার সৃতিভ্রষ্ট হইয়াছি আমাকে আবার আপনার বিশ্ব রূপ দর্শন দিন।‘ কৃষ্ণ তখন উত্তরে বলেন “ হে পার্থ, আমি যোগী শ্রেষ্ঠ। যোগ দ্বারা আবিষ্ট হইয়া আমি পরম পুরুষের বানী আমি মানব জাতিকে দিয়েছি। সেই পরম যোগ আমার পক্ষে এই জন্মে আর ধারন করা সম্ভব নহে। তাই এর সারমর্ম আমি তোমাকে বলিতেছি, শ্রবন করো।“এতে পরিষ্কার বোঝা যায় যে আমি বলতে উনি কোন আমিকে নির্দেশ করেছিলেন। কিন্তু বোকারা এই আমি বলতে কৃষ্ণকে ধরে নিয়েছেন। কৃষ্ণ বোধ হয় ওপরে গিয়ে নিজেই নিজের মাথা চাপড়াচ্ছেন।যাইহোক যদি আমি ভগবত গীতাকে কৃষ্ণের বানী সত্যি ধরেও নেই তারপরও বলবো সেই পরম সত্ত্বা আর কেউ নন শিব নিজে। কেন বলছি! অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই? একটু পেছনে যাই। ভগবান বিষ্ণু কৃষ্ণের জন্মের আগে উনি ত্রেতা যুগে যে শরীর ধারন করেছিলেন তাঁর নামটা নিশ্চয়ই আপনারা জানেন। মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রী রাম। উনিও কৃষ্ণের মতনই ভীষণ শিব ভক্ত ছিলেন। রাম যখন সীতা হরনের পর বিলাপ করতে থাকেন তখন মহামুনি অগস্ত্য রামকে শিব আরাধনার জন্য বলেন। আর সেই পরমাত্তার স্বরূপের জ্ঞ্যান ও বর রামকে প্রার্থনা করতে বলেন। এরি পরিপ্রেক্ষিতে রাম শিব আরাধনা করেন আর পরম পুরুষ শিবের দর্শন লাভ করেন। প্রভু শিব শ্রী রামকে পরম জ্ঞ্যান ও মানব আত্মার প্রকৃত স্বরূপের কথা ব্যাক্ত করেন যা উনারি পরবর্তী জন্ম শ্রী কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন। বিশ্বাস হয় না?! শিব গীতার সাথে ভাগবত গীতার শ্লোকগুলো একটু মিলিয়ে দেখতে পারেন। বরং শিব গীতায় মানব ভ্রুনের অনেক বিস্তারিত বর্ণণা পাবেন যা আধুনিক বিজ্ঞ্যান বলে।
কলি যুগে শিব মানেই মুক্তি। শুধু কলিযুগে কেন, সর্ব যুগে, সর্ব সময়ে শিব নামে অথবা শিব ভক্তিতেই মুক্তি হয়। শাস্ত্র থেকে এই বিষয়ে অসংখ্য উদ্বৃতি দেয়া যায়। তবে এতে লেখার আকার বড় হবে অন্য কিছুই না। তবে অল্প কিছু দিলাম। বুঝতে পারলেই হল। যারা খুঁতখুঁতে মনের মানুষ তাঁদের বিচার বিশ্লেষণ করতে অনুরোধ করবো। আর যারা বিনীত ও অহংমুক্ত হয়ে জিজ্ঞ্যাসু, তাদেরকে মনোযোগ দিয়ে অনুধাবন করতে প্রার্থনা করবো।
নিউজ ডেস্ক
বদলে গেলো নববর্ষের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম
চট্টগ্রামে জব্বারের বলীখেলা
ঋষি অরবিন্দ
পরম দয়ালের বড় আদরের পাঞ্জাধারী ঋত্বিক
সুশিক্ষিত শিক্ষক বাঁচাও দেশ বাঁচবে
কলিযুগে পরমেশ্বর ভগবান শিব
॥ দোলন কান্তি ধর ॥ ভগবান শিব সচ্চিদানন্দঘন লীলাময় পরম প্রভু। তিনি সত্য, সনাতন, অনাদি ও অনন্ত ব্রম্মহের স্বরূপ। তিনি সর্বশক্তিমান, শাশ্বত, নিরঞ্জন। সাকারে তিনি মহাদেব, লীলাময় প্রভু শিব, বিষ্ণু, ব্রম্মা ইত্যাদি নামে জানা গেলেও তিনি আদতে নিরাকার। এরজন্য উনার কোন মুর্তি পূজা হয় না। লিঙ্গম বা লিঙ্গ পূজা করা হয়। কিছু বিকৃত মস্তিষ্ক উনার এই পূজা কে পুরুষের লিঙ্গের সাথে তুলনা করে ধর্মকে হেয় বা নীচু দেখানর চেষ্টা করে। কিন্তু আদতে অজ্ঞ্যান ও মুর্খতার দরুন তাঁরা এর গুঢ তত্ত্ব অনুধাবন করতে ব্যার্থ হয়। সংস্কৃত লিঙ্গাম শব্দ থেকে লিঙ্গ শব্দের উৎপত্তি। যার অর্থ হল চিহ্ন। অর্থ্যাত পরম পুরুষ নিরাকার পরম ব্রহ্মের একটি চিহ্নকে আমরা উপাসনা করি। যা অনেকটাই নিরাকার ঈশ্বর উপাসনার মতন। পবিত্র বেদের মাঝে যে রুদ্রকে আমরা দেখি তা আসলে নিরাকার সেই পরম তত্ত্বের রূপ। এরজন্যই শৈবদের মাঝে অতিমার্গ ও মন্ত্রমার্গ শৈবরা পরম তত্ত্বের বৈদিক রুদ্রকে উপাসনা করেন। বলাবাহুল্য আমি নিজেও অতিমার্গ শৈবইসম অনুসরন করি। তাই যে বৈদিক রুদ্র ও পরম তত্ত্ব রূপ শিব এর মাঝে অভেদ করেন তিনি অল্প বিদ্যায় পারদর্শি এই কথা বোঝাই যায়। পরম নয়ন্তা, পরম প্রভু, পরম শক্তিমান। তিনি চির সুন্দর, চির নিরুপম। রহস্যময় মনরম তাঁর অপ্রাকৃত লীলা। তিনিই একমাত্র পরম সত্য ও অদ্বিতীয় পরমেশ্বর। শান্তম শিবম অদ্বৈতম। তাই শিব তত্ত্বই একমাত্র পরম তত্ত্ব। কিন্তু কিছু অজ্ঞ লোক এই বিষয়ে একেবারেই না জেনে বিজ্ঞ সাজতে গিয়ে অযথাই অপকথা বলে বেড়াচ্ছেন। বাংলাদেশী হিন্দুদের কাছে শিব বা মহাদেব হলেন তম গুন সম্পন্ন এক শ্মশানবাসী। যিনি মদ গাঁজা আর ভুত প্রেত নিয়ে পরে থাকেন। তাঁকে এই দেশের মানুষরা এতো মুল্য দেয় না বর্তমানে। কারন ইনি নাকি মুক্তি দিতে পারেন না। অবশ্য এইসব অবান্তর কথা এই অঞ্চলে বেশীদিন হয় নাই। আগে এই অঞ্চলের মানুষদের প্রধান উপাস্য ছিলেন মা কালী। যিনি দক্ষিণা কালী হিসাবে খুব জনপ্রিয় ছিলেন। চৈতন্য মহাপ্রভু আসার পর এই অঞ্চলে গৌড়ীয় মতবাদ বিস্তৃতি লাভ করে। এইখানে শাক্তবাদ এর কল্যানে মানুষ শিব সম্পর্কে এতটা জ্ঞ্যানি ছিলেন না। কিন্তু শিব এর পূজা ঠিকই করতেন। পূজা বলতে শিব লিঙ্গে একটু দুধ ঢেলে একটা কলা মাথায় দিয়ে বোম বোম বা ভলে বাবা ঠান্ডা হউ এই ধরনের আচরণ যা এখনও চলে আসছে। ব্যাপারটা অনেকটা যেন শিবকে ঠা-া রাখ নাহলে উনি পাগলামি করে সব নষ্ট করে দিবেন। কিন্তু আসলে কি তাই? এরজন্য আমার কিছু বক্তব্য শাস্ত্রের আলোকে ব্যাখ্যা করবো।যেহেতু এইদেশের সবাই পুরান তথা সংহিতায় বিশ্বাসী তাই আমি এর আলোকেই সমস্ত কিছু ব্যাখ্যা করবো। যারা বেদ বা উপনিষদ এর রেফারেন্স চান তাঁরা আমাকে ইনবক্স করতে পারেন। ভগবান শিব সাক্ষ্যাৎ সত্য সনাতন পরমেশ্বর। তিনি কালের উর্ধে বিরাজিত মহাকালেশ্বর। কাল বা সময় উনার অধীন। তাই সর্বযুগে সবার আরাধ্য ভগবান শিব। কিন্তু ঐ যে, অসাধু ও মুখ্যরা অপকথা বলে আর মানতে চায় না। তাই শাস্ত্র থেকে কিছু কথা বলবো।
অজ্ঞরা বলে থাকে যে , কলি কালে নাকি এক কৃষ্ণ নামে মুক্তি বাকীরা নাকি মুক্তি দিতে পারেন না। এরজন্যই যারা শিব উপাসনা করেন এদেরকে এরা হেয় বা হীন চোখে দেখে। কথাটা একটু যদি ঘুরিয়ে বলি তাহলে বলা যায় শাস্ত্রে শিব নামে মুক্তি নেই এই কথা নেই। বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় এরা শিব, দুর্গা, কালী ভক্তদের ইনিয়ে বিনিয়ে বা সরাসরি বলতে শুরু করে কলি যুগে নাকি এক কৃষ্ণ নাম ছাড়া মুক্তি নেই। এসব ক্ষেত্রে এরা কয়েকটি শ্লোক আওড়ায়। যথা- হরিনাম্ হরিনাম্ হরিনামব্য কেবলম্, কলৌও নাস্তব্য নাস্তব্য নাস্তব্য গতিরন্যথা, সারমর্ম হল ‘হরি( এদের ভাষায় কৃষ্ণ) নাম ছাড়া কলি যুগে মুক্তি নাই।‘ আর একটি শ্লোক হলÑ ভাগবত গীতার : সর্ব ধর্ম পরিত্যাজ্যং মামেকং শরনং ব্রজ, মানে সব ধর্ম ত্যাগ করে আমার স্মরণ নাও।
একটু বিশ্লেষনে যাই এবার। প্রথমে আসি হরি নাম নিয়ে। অবশ্যই, হরি মানে বিষ্ণু নামে মুক্তি আছে। কারন উনি পরম পুরুষের একটি পালন রূপ। উনার নাম নিয়ে ভক্ত প্রহ্লাদ বা ধ্রুব মুক্তি পেয়েছিলেন। এর হাজার প্রমান আছে। মহাবিষ্ণুর শ্রী চরনে আমার হাজার হাজার প্রনাম। কিন্তু অজ্ঞ্যানীরা এইখানে কৃষ্ণকে কোথায় পেলেন? যদি কেউ বলেন কৃষ্ণ উনার অবতার তাহলে উনার সাথে কৃষ্ণকে জড়ালে দোষ কথায়? আমি বলবো নৃসিংহ, রাম, পরশুরাম, বরাহ উনাদের সাথেও জড়ান না কেন? বা কেনই উনাদের নিয়ে আপনারা কোন পুরান আবিস্কার করেন না?জানি করবেন না কারন এতে আপনাদের রমরমা ব্যাবসা নষ্ট হবে আর সত্য উন্মচিত হবে। এবার আসি ভাগবত গীতার শ্লোকে।গীতা নিয়ে আমার অনেক কিছু বলার আছে। আসলে মুর্খ ও অল্প শিক্ষিত লোকজন বলে ভাগবত গীতা নাকি বেদসার সংক্ষেপ। শুনে হাসি পায় এরকম মুর্খ কথা শুনলে। আমাদের ধর্মে মোট ২০০ ধরনের গীতা আছে এর মাঝে ৪২টি গীতা অন্যতম।গীতা বলতে ৯৮% মানুষ ঐ ভাগবত গীতাকেই বোঝেন। বাস্তবে এর বাইরেও আরও অনেক কিছু যে আছে তা এই মুর্খ্য কুয়োর ব্যাঙেরা জানেন না। হিন্দু ধর্ম বলতে এরা শুধু বোঝে গৌড়ীয় তিলক দেয়া, মালা জপা আর একাদশী রেখে মনের সুখে লাফানো। হিন্দু ধর্মের খুব নগন্য ও তুচ্ছ একটি বিষয়কে আঁকড়ে ধরে এরা মনে করেন বিশ্ব জগতের সমস্ত জ্ঞ্যান আমার মাথায় গিজ গিজ করছে। আসলে যে ভগবত গীতা আপনারা দেখেন তা হিন্দু ধর্মের ইতিহাস নামে খ্যাত মহাভারতের খুব ছোট একটি অংশ মাত্র।শুধু এক মহাভারত থেকে প্রায় ২০+ গীতা বের হয়েছে। এবার আসি সেই ভগবত গীতা প্রসঙ্গে। ভগবত গীতাতে কৃষ্ণ আমি বলতে নিজেকে যে বোঝান নি তা অনুগীতার উৎপত্তিই আমাদের বলে দেয়। মহাভারতের ১৪ তম অধ্যায়ের অশ্বমেধ পর্বে অর্জুন যখন কৃষ্ণকে বলেন “হে কৃষ্ণ আমি ভগবত গীতার সৃতিভ্রষ্ট হইয়াছি আমাকে আবার আপনার বিশ্ব রূপ দর্শন দিন।‘ কৃষ্ণ তখন উত্তরে বলেন “ হে পার্থ, আমি যোগী শ্রেষ্ঠ। যোগ দ্বারা আবিষ্ট হইয়া আমি পরম পুরুষের বানী আমি মানব জাতিকে দিয়েছি। সেই পরম যোগ আমার পক্ষে এই জন্মে আর ধারন করা সম্ভব নহে। তাই এর সারমর্ম আমি তোমাকে বলিতেছি, শ্রবন করো।“এতে পরিষ্কার বোঝা যায় যে আমি বলতে উনি কোন আমিকে নির্দেশ করেছিলেন। কিন্তু বোকারা এই আমি বলতে কৃষ্ণকে ধরে নিয়েছেন। কৃষ্ণ বোধ হয় ওপরে গিয়ে নিজেই নিজের মাথা চাপড়াচ্ছেন।যাইহোক যদি আমি ভগবত গীতাকে কৃষ্ণের বানী সত্যি ধরেও নেই তারপরও বলবো সেই পরম সত্ত্বা আর কেউ নন শিব নিজে। কেন বলছি! অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই? একটু পেছনে যাই। ভগবান বিষ্ণু কৃষ্ণের জন্মের আগে উনি ত্রেতা যুগে যে শরীর ধারন করেছিলেন তাঁর নামটা নিশ্চয়ই আপনারা জানেন। মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রী রাম। উনিও কৃষ্ণের মতনই ভীষণ শিব ভক্ত ছিলেন। রাম যখন সীতা হরনের পর বিলাপ করতে থাকেন তখন মহামুনি অগস্ত্য রামকে শিব আরাধনার জন্য বলেন। আর সেই পরমাত্তার স্বরূপের জ্ঞ্যান ও বর রামকে প্রার্থনা করতে বলেন। এরি পরিপ্রেক্ষিতে রাম শিব আরাধনা করেন আর পরম পুরুষ শিবের দর্শন লাভ করেন। প্রভু শিব শ্রী রামকে পরম জ্ঞ্যান ও মানব আত্মার প্রকৃত স্বরূপের কথা ব্যাক্ত করেন যা উনারি পরবর্তী জন্ম শ্রী কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন। বিশ্বাস হয় না?! শিব গীতার সাথে ভাগবত গীতার শ্লোকগুলো একটু মিলিয়ে দেখতে পারেন। বরং শিব গীতায় মানব ভ্রুনের অনেক বিস্তারিত বর্ণণা পাবেন যা আধুনিক বিজ্ঞ্যান বলে।
কলি যুগে শিব মানেই মুক্তি। শুধু কলিযুগে কেন, সর্ব যুগে, সর্ব সময়ে শিব নামে অথবা শিব ভক্তিতেই মুক্তি হয়। শাস্ত্র থেকে এই বিষয়ে অসংখ্য উদ্বৃতি দেয়া যায়। তবে এতে লেখার আকার বড় হবে অন্য কিছুই না। তবে অল্প কিছু দিলাম। বুঝতে পারলেই হল। যারা খুঁতখুঁতে মনের মানুষ তাঁদের বিচার বিশ্লেষণ করতে অনুরোধ করবো। আর যারা বিনীত ও অহংমুক্ত হয়ে জিজ্ঞ্যাসু, তাদেরকে মনোযোগ দিয়ে অনুধাবন করতে প্রার্থনা করবো।
মন্তব্য করুন
পাঠক প্রিয়
নীল বা নীলকণ্ঠ মহাদেব
পশুবলিতে দ্বিধান্বিত মন
বসন্ত উৎসব যেভাবে এলো
দোল উৎসবের ইতিহাস
হোলি খেলার প্রথা কখন কীভাবে শুরু হয়?