পিঠা: বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য

প্রত্যেক দেশেরই একটি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন থাকে যা তাদের খাদ্য ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা নিঃসন্দেহে পিঠা। আমাদের জন্য পিঠা শুধু একটি খাবারই নয়, স্মৃতির ভাণ্ডারও বটে।

শৈশবে শীতকাল মানেই যেন ছিল মায়ের হাতের বিভিন্ন স্বাদ ও নকশার পিঠা আর সেই পিঠাগুলোর পেছনে ইতিহাসের গল্প শোনা। অথবা ধোঁয়া উঠা গরম চিতই পিঠার সঙ্গে মাংসের ঝোল দিয়ে মজাদার নাস্তা।

এখন শীতকালে শহরের সবখানেই ঠেলাগাড়ি ও ভ্যানে চিতই পিঠা বিক্রি করা হয়, সঙ্গে থাকে হরেক রকমের ভর্তার সমাহার। থাকে চিংড়ি, সরিষা, শুঁটকি, ধনে পাতাসহ অসংখ্য স্বাদের ভর্তা। আর যারা মিষ্টিপ্রেমী তাদের জন্য তো ধোঁয়া উঠা গরম গরম গুড়, মালাই ও নারকেলে ভরা ভাপা পিঠা থাকেই।

রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আমরা পিঠা খাই বা বাসায় ফেরার পথে পরিবারের জন্য যখন পিঠা কিনি, তখন আমাদের মধ্যে এক রকমের আনন্দ কাজ করে। তবে এগুলো ছাড়াও দেশের আনাচে-কানাচে হরেক রকমের পিঠা পাওয়া যায়।

চিতই পিঠা

প্রতি বছর শীতকাল আসলেই আমাদের রান্নাঘরে মাটির পাত্র দেখতে পাওয়া যায়, আর সেই পাত্র শুধু চিতই পিঠা বানানোর জন্যই ব্যবহার করা হয়। চিতই পিঠা ভর্তা, পুর বা দুধে ভিজিয়ে খাওয়া হয়। দুধ চিতই অল্প দুধে ভেজানো থাকে গুড় দিয়ে আর উপরে নারকেল দেওয়া থাকে।

পাটিসাপটা পিঠা

পিঠার কথা উঠলে পাটিসাপটা পিঠার কথা বলতেই হবে। চালের গুঁড়ো ও খেজুর গুড়ের মোলায়েম আবরণের ভেতর ঘন দুধে তৈরি পায়েস বা নারকেল দিয়ে তৈরি করা হয় পাটিসাপটা পিঠা। এলাকাভেদে পাটিসাপটা পিঠা পরিবেশন ভিন্ন হলেও সবগুলোই হয় অনন্য সুস্বাদু।

ভাপা পিঠা

ভাপা পিঠা বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় একটি পিঠা। এই রাইস কেকটি তৈরি করা হয় চালের গুঁড়ো দিয়ে, ভেতরে থাকে গুড় ও নারকেলের পুর। বাড়িতে, দোকানে ও রাস্তার ধারের ঠেলায় ভাপা পিঠার ধরনে পার্থক্য থাকলেও পিঠার স্বাদ একই থাকে। খুব কম মানুষই শীতকালের এই জনপ্রিয় মিষ্টান্ন উপভোগ করতে ভোলেন।

নকশি পিঠা

বাংলাদেশ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যেরএকটি উদাহরণ নকশি শিল্প। এই শিল্প আমাদের খাবারেও জায়গা করে নিয়েছে। সেখান থেকেই নকশি পিঠা। এই পিঠাগুলো চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি করা হয় এবং খেজুরের গুড়ের মিশ্রণে ভিজিয়ে রাখার আগে সৃজনশীলভাবে নকশা কাটা হয়।

পুলি পিঠা

পুলি পিঠাও বিভিন্ন উপায়ে তৈরি করা যায় ও খাওয়া যায়। তবে ঐতিহাবাহী পুলি পিঠা গুড় ও নারকেলের পুর দিয়ে তৈরি করা হয়। দুধ পুলিকে দুধে ভিজিয়ে রাখা হয় এবং স্বাদের জন্য মশলা ও খেজুর গুড় ও নারকেল ব্যবহার করা হয়। পুরে ভরা পুলি পিঠা তেলে ভাজা হয়।

বাংলাদেশে পিঠা আনন্দ ও উদযাপনের প্রতীক, যা শীতের সকাল এবং সন্ধ্যাকে উপভোগ্য করে তোলে। শীতকালে আমাদের দেশে বিয়ের মৌসুম চলে আর পিঠা এই বিয়ে উদযাপনের একটি অন্যতম অংশ। শহরের বিভিন্ন জায়গায় পিঠা উৎসব বা পিঠা মেলার আয়োজন করা হয় যেখানে মানুষ সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পিঠা দেখতে এবং খেতে আসে।

আমাদের কাছে পিঠা শুধু একটি খাবার নয়। এটি রন্ধন শিল্প, ঐতিহ্য এবং আনন্দের সংমিশ্রণ।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন