
অধ্যাত্মঃ – ঋষি অরবিন্দ
একটা বিশেষ ধর্ম্মমত অপেক্ষা আধ্যাত্মিকতা অনেক বৃহত্তর জিনিষ। আর আধ্যাত্মিকতা যে নূতন একটা ব্যাপকতর অর্থ লইয়া জগতে ফুটিয়া উঠিতেছে, তাহার মধ্যে অতি উদারতম ধর্ম্মমতও হইয়া পড়িবে একটা ধারা, একটা অঙ্গমাত্র। সেই আধ্যাত্মিকতা হইতেছে বিশ্বজনীন ধর্ম্ম অর্থাৎ যাহার প্রেরণায় মানুষ খুঁজিতেছে, শাশ্বতকে, দিব্যকে, বৃহত্তর সত্তাকে, একত্বের উৎসকে; চেষ্টা করিতেছে যাহাতে লৌকিক জীবনের সহিত লোকাতীত জীবনের স্থাপিত হয় একটা নিকট সম্বন্ধ, সহজ সামঞ্জস্য, সম্মিলন।
আধ্যাত্মিকতা বলিতে আমরা যে কোন রকম জিনিষ কিছু বাদ দিয়া রাখিতে চাহি, তাহা নয়। মানবজীবনে যাহা কিছু মহৎ আদর্শ, আধুনিক জগতে যাহা কিছু বৃহৎ সমস্যা, মানুষের যে কোন প্রকারের উর্দ্ধমুখী প্রয়াস, মানুষের অন্তরাত্মা যে কোন নিবিড় প্রেরণা বা বিশেষ উপায়কে ধরিয়া চাহিতেছে বিকাশ, উন্নতি, প্রসারতা, শক্তি, সামর্থ্য, আনন্দ, জ্যোতিঃ, পরিপূর্ণতা— সকলই, সমস্তই আমাদের লক্ষ্যের অন্তর্ভুক্ত। দেহ নাই যাহার, মন নাই যাহার সেই আত্মা বা পুরুষ আর যাহাই হউক, মানুষ নয়। সুতরাং মানুষের যে আধ্যাত্মিকতা তাহা দেহ প্রাণ মনকে যেন হীন অকিঞ্চিৎকর বলিয়া বিবেচনা করে না। বরং এই সমস্তকে বিশেষ প্রয়োজনীয়, বিশেষ মূল্যবান বলিয়াই ধরিতে হইবে—কারণ, এই সকলের ভিতর দিয়া, এই সকলকে যন্ত্র করিয়া তবে মানুষের অধ্যাত্মজীবন লীলায়িত হইয়া উঠে।