
ঔপন্যাসিকা
বনকন্যা
দেবাশীষকুন্ডু
(এক)
রায়া ভট্টাচার্য এই প্রথম ছাত্রীদের সঙ্গে রূঢ় ব্যবহার করল, আজকে সে দ্বাদশ শ্রেণীর ক্লাস রুমে গিয়ে দেখে ব্ল্যাকবোর্ডে তার একটি কিম্ভূত কিমাকার কার্টুন এঁকে রাখা হয়েছে, যা নিয়ে কিছু ফিচেল ছাত্রীরা হাসাহাসি করছে, অন্যদিন হলে হয়তো বিষয় টি নিয়ে উত্তেজিত না হয়ে টেকনিক্যালি হ্যান্ডল করত, কিন্তু গত সপ্তাহ পুরোটা বিশ্রামে কাটিয়েও তার মাথা ভার, উদ্বেগ আর মানসিক অস্থিরতা সামান্যতম কমেনি, বরং, ক্রমশ: বেড়েই চলেছে।
অবশ্য রায়া তার আসল নাম নয় , সে আদপে এই গ্রহের মানুষই নয়। তার জন্ম হয়েছিল এই গ্রহ থেকে বারো হাজার নশো আলোকবর্ষ দূরের এক গ্রহে ।
তার কৈশোরে পদার্পণের সাথে সাথে মহাজাগতিক অভিভাবকেরা তাকে পাঠিয়েছেন এই গ্রহে আরো আটজনের সাথে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দিয়ে।
অভিযোজনের ক্ষমতা কে কাজে লাগিয়ে তারা সকলে এই গ্রহের অধিবাসী মানুষের চেহারা নেয় ও গ্রহের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে, তাদের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম মানসিক তরঙ্গ,
যে মাধ্যমে অনভিপ্রেত অনুপ্রবেশ সম্ভব নয়।
তাদের মধ্যে এই তরঙ্গ মাধ্যমে যোগাযোগ সাধারণত প্রতি ৩০ দিনে একবার হয় নির্দিষ্ট সময় মেনে।
কিছুদিন আগে ভারতের ম্যানগ্রোভ বাঁচাও আন্দোলনের পুরোধা অন্বেষা মুখার্জি, অস্ট্রিয়ার জীববিজ্ঞানী অগাস্ট থ্যালহেমার, চীনা সাংবাদিক চু লেড সিন ও জার্মান ভূতাত্তিক রিতা হেসের সঙ্গে শেষ যোগাযোগ হয়, তারপর এক মাসের বেশি কেটে গেছে। কিন্তু তাদের কারো সাথে আর যোগাযোগ হয়নি।
আমেরিকান আর্কিওলজিস্ট কোনি লির সাথে শেষ যোগাযোগ হয়েছিল দু মাসের ওপরে ।
উদ্বিগ্ন রায়া অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসা বিজ্ঞানী সাসকিয়া ক্লোপেনবার্গ আর আফ্রিকার ইথিওপিয়া ইউনিভার্সিটির জুলজি বিভাগের ডিন মারিসা কিবই এর সাথে প্রাথমিক আলোচনার পর আপৎকালীন পরিস্থিতিতে দলের অন্য সদস্যদের খুঁজে বার করার জন্য বিশেষ শক্তিশালী তরঙ্গ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত নিল ।
এই তরঙ্গ লক্ষ্যবস্তুর নির্দিষ্ট তরঙ্গের অভিঘাতে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসবে। তবে একটাই প্রতিবন্ধকতা, এই শক্তিশালী তরঙ্গ সৃষ্টির জন্য যে পরিমাণ মানসিক শক্তি ব্যয় হবে তাতে তাদের মানুষ রূপ পরিবর্তন হয়ে আসল রূপে পরিণত হয়ে যাবে, যা হবে চিরস্থায়ী এবং জীবনী শক্তি দ্রুত নিঃশেষ হয়ে আসবে।
যথা নিয়মে এই শক্তিশালী তরঙ্গ প্রেরণের নির্দিষ্ট সময় পর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে এলো, যা বিশ্লেষণ করে জানা গেল ব্যাপক পরিবেশ দূষণ ও অরণ্য ধ্বংস হওয়ার ফলে নিখোঁজ সদস্যরা কেউ আর জীবিত নেই। এদিকে অবশিষ্ট জীবিত সদস্যদের জীবনের শক্তি দ্রুত নিঃশেষ হতে চলেছে। সকলে মেক্সিকোর গভীর জঙ্গলে যেখানে তথাকথিত আধুনিক মানব সভ্যতা প্রবেশ করেনি, সেখানে তাদের যে সদস্য রয়েছে তাকে নিজেদের অবশিষ্ট জীবনী শক্তি মানসিক তরঙ্গ মাধ্যমে প্রেরণ করল।
এই সদস্যটির দেহে কৃত্রিমভাবে মানব ভ্রুনকে প্রতিপালিত করার ক্ষমতা রয়েছে ।