হেলে পড়েছে তিন তলা ভবন

নগরের পাহাড়তলী থানার উত্তর সরাইপাড়া শাহ মডেল হাউজিং সোসাইটিতে একটি তিন তলা ভবন পাশের আরেকটি তিন তলা ভবনে হেলে পড়েছে। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে হেলে পড়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় ফায়ার সার্ভিস। তবে ভবনটি পুরোপুরি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ না হওয়ায় ভবনের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়নি ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। তবে এলাকায় আতংক দেখা দিয়েছে। এদিকে ঘটনা তদন্তে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রহমানের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের একটি টিম। এসময় ভবন দুটি ও পাশের সেমি পাকাঘর থেকে ৩০টি পরিবারকে সরিয়ে দেয়া হয় বলে জানায় জেলা প্রশাসন।

জানা গেছে, ভবনটি গয়নাছড়া খালের পাড়ে গত বছর নির্মাণ করা হয়। এই ভবনের উত্তর পাশে ২০০৭ সালে নির্মাণ করা তিন তলা আরেকটি ভবন রয়েছে। নির্মাণের সময় দুই ভবনের মাঝখানে দূরত্ব ছিল মাত্র ৬ ইঞ্চি। হেলে পড়ায় সেটি আরো কমে এসেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। হেলে পড়া ভবনে ছয়টি পরিবার বাস করে। জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের আওতায় গয়নাছড়া খালে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজ চলছে। এর অংশ হিসেবে লোহার শীট বসানো হচ্ছে। কয়েকদিন আগে মাটি সরে ভবনের সীমানা দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়। এছাড়া গত রোববার ভূমিকম্পের পর ভবনটি হেলে পড়ে বলে ধারণা করছেন এলাকাবাসী। এতে ঝুঁকি মনে করে যে ভবনের উপর হেলে পড়েছে তার মালিক বিষয়টি সোমবার রাতে ফায়ার সার্ভিস ও সিডিএ’কে জানায়।

ফায়ার সার্ভিসের উপ–সহকারী পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক আজাদীকে বলেন, খালে পাইলিং করার সময় ভবনের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। এতে ভবনটি একটু হেলে পড়ে। তবে পাশের ভবনে ধাক্কা লাগেনি। ভবন থেকে লোকজন সরানো হয়নি বলেও জানান তিনি।

জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী আজাদীকে বলেন, ভবনটি এমনভাবে নির্মাণ করেছে পাশের ভবনের সাথে জায়গাও ছিল না। ভবনটি হেলে পড়েছে, সেরকম কিছু নয়। কেন্টিলিভার ওয়াল ফেটে গেছে। সেটা মূল ভবনের নয়। তিনি বলেন, খালে কাজ করার জন্য ভবনটির কোনো ক্ষতি হয়নি। আর ভবনটি কাজের জন্য হেলে পড়েনি। আগে থেকেই ও রকম ছিল। শুধু কাজ শুরুর পর ভবনের নিচের একটি অংশ থেকে মাটি সরে গেছে। যা কাজ শেষ হওয়ার পর আবার ঠিক করে দেওয়া হবে। দেয়াল করতে হলে গ্রেটবিম দিয়ে করতে হয়। ওই ভবনটির সীমানা দেয়ালের নিচে গ্রেট বিম নেই। শিট ফাইলিং (স্টিলের পাত বসানো) করার সময় সীমানা দেয়ালে ফাটল ধরার পর ভবন ও সীমানা দেয়ালের মাঝের অংশের মাটি দেবে গেছে। তাতে মনে হচ্ছে ভবনটি হেলেছে। এতে কোনো ঝুঁকি নেই।

ভবন মালিক মফজল আহমদ বলেন, খালে শিট বসানোর কাজ চলছে। মাটি দেবে গিয়ে আমার বিল্ডিংয়ের সীমানা দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়। তাদের আগেই জানিয়েছি। তারা বলেছে, দেখবে। কিন্তু কিছু করেনি। আজকে ১২টার সময় সীমানা দেয়ালটার নিচের মাটি সরে যায়। বিল্ডিং হেলে যায়নি, নিচে থেকে দেখে মনে হচ্ছে। উপর থেকে দেখলে ওরকম না।

পাশের ভবন মালিকের প্রতিনিধি পরিচয়ে উম্মে মারিয়া সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার রাতে আমরা বুঝতে পারি যে, পাশের বিল্ডিংটা একেবারে আমাদের বিল্ডিংয়ের সঙ্গে ঘেষে পড়েছে। রাতেই আমরা বিষয়টি সিডিএ, ফায়ার সার্ভিসকে অবহিত করি। এটার কারণে আমাদের বিল্ডিংও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

উল্লেখ্য গত ২৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলার সময় চট্টগ্রাম নগরের পশ্চিম শহীদ নগরের তৈয়াবিয়া হাউজিং এলাকায় একটি চারতলা ভবন পাশের ছয়তলা ভবনের ওপরে হেলে পড়ে। অবশ্য এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ঝুঁকি এড়াতে এই দুটিসহ পাশের আরও একটি ভবন থেকে সব বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি : জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে সিএমপির প্রতিনিধি, সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি, সিডিএর প্রতিনিধি, বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি, পিডব্লিউডি‘র প্রতিনিধিকে রাখা হয়েছে। কমিটি প্রয়োজনে চট্টগ্রাম প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করবে। ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আজকের মধ্যে ভবন সংশ্লিষ্ট সব তথ্য উপাত্ত যাচাই করে কিছুদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন বলে জানান জেলা প্রশাসক।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রহমানের নেতৃত্বে পরিদর্শনে যান কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) উমর ফারুক, সিনিয়র সহকারী কমিশনার জামিউল হিকমা সজীব। এসময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ভবন সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেন। উমর ফারুক বলেন, হেলে পড়া ভবনটির পেছনে খাল খনন প্রকল্পের কাজ চলছে। সেই খাল খনন করায় ভবনের পিলার দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে বাসিন্দারা দাবি করেছেন। পাশাপাশি সেমি পাকা দুটি ঘর ভেঙে গেছে দেখা যায়। দুটি ভবন ও সেমি পাকাঘরগুলোর প্রায় ৩০টি পরিবারকে ঝুকিপূর্ণ এসব স্থাপনা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন