
জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন ও সংখ্যালঘু আইন প্রণয়নসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। এ সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি করা হয়। শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিকের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার। তাদের দাবিগুলো হলো, শারদীয় দুর্গাপূজায় ৩ দিনের সরকারি ছুটি দিতে হবে, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন করে প্রকৃত মালিককে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে, জাতিগত সংখ্যালঘু এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর (আদিবাসী) প্রতি বৈষম্যমূলক সকল আইনকানুন বাতিল করতে হবে, হিন্দু ফাউন্ডেশন গঠন করতে হবে এবং তা না হওয়া পর্যন্ত বাজেটে হিন্দুদের সংখ্যানুপাতে অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে, মঠ-মন্দির নির্মাণ ও উন্নয়নে বাজেটে বরাদ্দ দিতে হবে এবং দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার, সংরক্ষণ ও উন্নয়নে দ্রুত আইন প্রণয়ন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসছে। যা সনাতন সম্প্রদায়ের জন্য আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য বর্তমান সরকার এবং সকল ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি যথাযথ ভূমিকা পালনের অনুরোধ জানাই। বিশেষ করে অতীতে যারা সাম্প্রদায়িক নির্যাতন নিপীড়নে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ন্যাক্কারজনক ভূমিকা রেখেছে, তাদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী না করার জন্য সকল রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তাছাড়া আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব, লক্ষ্মীপূজা ও কালীপূজা চলাকালীন কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি না দেওয়ার জন্য সব রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, গত বছর সারা দেশে দুর্গাপূজার সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১৬৮। এবার এখন পর্যন্ত এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৪০৮। ঢাকা মহানগরে পূজার সংখ্যা ২৪৫, গত বছর ছিল ২৪২। বর্তমান সরকার রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আসার পর প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে পূজোর সংখ্যা বেড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে প্রশাসনিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা বিনির্মাণে সম-অধিকার ও সমমর্যাদা নিশ্চিতে সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা এমন একটি সমাজের অপেক্ষায় আছি, যে সমাজে অসাম্প্রদায়িক পরিবেশে, কোনো ধরনের ভয়ভীতি এবং পুলিশি পাহারা ছাড়া ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালিত হবে। এই পরিবেশের জন্যই বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটিয়েছিলেন। এই পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলেই বঙ্গবন্ধু’র স্বপ্নের সোনার বাংলা সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। পূজা উদযাপন পরিষদ উত্থাপিত দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, শেখ হাসিনা সরকার সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীল নীতি গ্রহণ করলেও নানা অজুহাতে নানাভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মিথ্যা অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, মন্দিরে হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছে। নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণের আহ্বান জানাই।