অষ্টনাগ আরাধনায় তুষ্ট হন মা মনসা

মঙ্গলকাব্য মতে, মহাদেবের একনিষ্ঠ ভক্ত চাঁদ সওদাগর তাঁর পুজো করায় মর্ত্যে দেবীরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন মনসা। জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্ল পক্ষের দশমী অর্থাৎ দশহরা থেকে আশ্বিনের সংক্রান্তি অর্থাৎ ডাক সংক্রান্তি অবধি বাংলার গ্রামে গ্রামে অর্থাৎ লোকায়ত বঙ্গে মনসার আরাধনা চলে। মোটামুটি এই সময়টাই বর্ষার প্রকোপ থাকে বঙ্গদেশে। প্রাক বর্ষা, বর্ষা শেষের বৃষ্টি এবং বর্ষা কাল সব মিলিয়ে চার, সাড়ে চার মাস সাপের উপদ্রব বাড়ে। নদীমাতৃিক বঙ্গে তাই এই সময়টাই মনসা আরাধনার সময়। কারণ তিনি যে সর্পের দেবী। তাঁকে তুষ্ট করতে পারলেই সর্প দংশনের ভয় কাটবে। এছাড়াও আরও তিথি রয়েছে, যেমন আষাঢ় সংক্রান্তি, শ্রাবণ মাসের পঞ্চমী তিথি নাগ পঞ্চমী, পয়লা শ্রাবণ, শ্রাবণ সংক্রান্তি। এই তিথিগুলোয় মহাসমারোহে জগদ্গৌরী মনসার পুজো হয়। ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, দেবীভাগবতপুরাণে রয়েছে দেবীর মাহাত্ম্যের কাহিনি। কোথাও দেবীর প্রতিমার পুজো হয়। কোথাও দেবীর ঘট, পট পুজো পায়। এমনকী দেবী ঝাঁপিতে পুজো পান। কোথাও আবার মনসার ডাল অর্থাৎ ফনিমনসা গাছের ডালের পুজো হয়। দেবী মনসার প্রতিকৃতি সামনে রেখেও পুজো করা যায়। পুজো পায় অষ্টনাগের মূর্তিও। মনসা পুজো উপলক্ষ্যে অষ্টনাগের ভেলা ভাসানো হয় দিকে দিকে। আষাঢ় সংক্রান্তিতে হয় অষ্টনাগের পুজো। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, এই বিশেষ তিথিতে সর্প নিধন যজ্ঞের পরিসমাপ্তি ঘটেছিল। দেবীর পুজোয় দুধ ও কলা আবশ্যক। তাই যখনই কোথাও মনসা পুজো হয় দেবীর অনুচর অর্থাৎ অষ্টনাগের উদ্দেশেও নৈবেদ্য নিবেদন করতে হয়। মনসার সঙ্গে যে অষ্টনাগের পুজোর হয়, তাঁরা হলেন- ১) অনন্ত ২) বাসুকী ৩) পদ্ম ৪) মহাপদ্ম ৫) তক্ষক ৬) কুলীর ৭) কর্কট এবং ৮) শঙ্খ। মনসা হলেন মনের দেবী। মনে সর্পের মতো কিলবিল করে রিপু। বাসনা, কামনা হল সেই সর্পের হলাহল। অষ্টনাগ হল জীবনের প্রতীক। একদিকে তা অষ্টবিধ সিদ্ধি, অন্যদিকে তা নাগপাশ বা অষ্টপাশের অনুকল্প। মানব জীবন অষ্টপাশের দ্বারা জর্জরিত। মনসার পুজো হয় সর্পভয় থেকে পরিত্রাণের প্রার্থনায়। মা মনসার জীবনের অষ্টপাশ থেকে মুক্ত করেন। অষ্টনাগ কুণ্ডলিনী শক্তিরও প্রতীক। সর্পদংশনের ভয় থেকে মানবকূলকে রক্ষা করার জন্য প্রজাপতি ব্রহ্মা আদেশ দেন কশ্যপমুনিকে। ঋষি কশ্যপ মনে মনে চিন্তা করছিলেন মানবজাতির পরিত্রাণের উপায়, তাঁর মননক্রিয়া থেকে আবির্ভূতা হন এক স্বর্ণবর্ণা দেবী। মানসজাতা দেবী, মন থেকেই তাঁর জন্ম, তাই তিনি মনসা। শুধুমাত্র সর্প দংশন নয়, মনসা ধনদায়িনীও। ভক্তদের কাছে তিনি সন্তানপ্রদানকারিণী। সন্তানের আশাতেও দেবীর পুজো করেন অনেকেই। আদতেই তিনি মনসকাম পূরণের দেবী। মায়ের কৃপায় ভক্তদের দুঃখ দুর্দশা দূর হয়। অষ্টনাগের পুজোতেও থাকে এই সব কামনা। দেবীর সঙ্গে সঙ্গে দেবীর অনুচরদের তুষ্ট করা।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন